প্রথম আট ব্যাটসম্যানের সাত জনই গেলেন দুই অঙ্কে। কিন্তু ২০ ছাড়াতে পারলেন কেবল একজন- সৌম্য সরকার। ওমান ‘এ’ দলের পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও রান পেলেন না মুশফিকুর রহিম। ব্যাটিংয়ে হতাশার পর বোলিংয়ে শুরুটা ভালো হলেও শেষ পর্যন্ত পেরে উঠল না বাংলাদেশ। দারুণ এক জুটিতে শ্রীলঙ্কাকে জয় এনে দিলেন আভিশকা ফার্নান্দো ও চামিকা করুনারত্নে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মঙ্গলবার নিজেদের প্রথম অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে ৪ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ১৪৮ রানের লক্ষ্য ৬ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। ৩৫ পর্যন্ত যেতে পারেননি বাংলাদেশের কেউ। সর্বোচ্চ ৩৪ রান সৌম্যর। ৩০ ছাড়ানো জুটি কেবল একটি, ওপেনিংয়ে লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম শেখের ৩১। দারুণ বোলিংয়ে ৭৫ রানে প্রতিপক্ষের ৬ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ৯ ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ৭৩ রান। কিন্তু বল হাতে শুরুর পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেনি তাসকিন-মেহেদিরা। চামিকাকে নিয়ে ৮ ওভারেই আভিশকা মিলিয়ে ফেলেন সমীকরণ।
আবু ধাবির টলারেন্স ওভালে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করে বাংলাদেশ। তিন চার মেরে ডানা মেলার আভাস দেন লিটন দাস। তবে ভেসে যেতে পারেননি বেশি দূর। পিঠের ব্যথায় বিশ্রামে থাকা মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে থামান দুশমন্থ চামিরা (১৬)। আরেক প্রান্তে মোহাম্মদ নাঈম শেখ ভুগছিলেন রান করতে। রহস্য স্পিনার মাহিশ থিকসানার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে শেষ হয় তার ভোগান্তি। ১৯ বলে করেন তিনি ১১, নেই কোনো বাউন্ডারি। কাজে লাগাতে পারেননি ফ্রি হিটও। রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন সৌম্য। তবে তাকে খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন। আগের ম্যাচে ‘গোল্ডেন ডাক’ এর স্বাদ পাওয়া মুশফিক এক চারে ১৩ বলে করেন ১৩। এক ছক্কা মেরেই ফিরে যান আফিফ। রিস্ট স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন সৌম্য। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ২৬ বলে ৩৪ রানের ইনিংসে দুটি ছক্কার পাশে চার একটি। চাপে পড়া দলকে পরে টানতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান ও শামীম হোসেনও। চামিরার পরপর দুই বলে ফেরেন তারা। এক চারে ১৫ রান করা সোহান হন বোল্ড, শামীম (৮ বলে ৫) দেন ফিরতি ক্যাচ। শেষ দিকে একটি করে ছক্কা ও চারে অপরাজিত ১৬ রানের ইনিংসে দলকে দেড়শ রানের কাছে নিয়ে যান মেহেদি হাসান। তাসকিন আহমেদের হাত ধরে বোলিংয়েও শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারে ভাঙে শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি। তাসকিনের বলে নাঈমকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন কুশল পেরেরা। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তার প্রথম ২ ওভার থেকে আসে ২২ রান। তবে মেহেদি আক্রমণে এসেই এলবিডব্লিউ করেন পাথুম নিশানকাকে। দিনেশ চান্দিমালকে বোল্ড করে দেন সৌম্য। পাঁচে নেমে তেমন কিছু করতে পারেননি হাসারাঙ্গা। ফিরে যান রান আউট হয়ে। ভানুকা রাজাপাকসেকে শূন্য রানে সৌম্য বিদায় করার পর দাসুন শানাকাকে এলবিডব্লিউ করে দেন শরিফুল ইসলাম। একাদশ ওভারে ৭৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কা এরপর আর কোনো উইকেট হারায়নি। আভিশকা ও চামিকাকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৩ ওভারে লঙ্কানদের প্রয়োজন ছিল ৩৪ রান। ১৮তম ওভারে তাসকিন দিয়ে ফেলেন ২১ রান! অথচ আগের তিন ওভার মিলিয়ে তিনি দিয়েছিলেন কেবল ৪ রান। পরের ওভারেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা।
দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪২ বলে তিন ছক্কা ও দুই চারে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন আভিশকা। অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেটে তার সঙ্গে ৭৩ রানের জুটি উপহার দেওয়া চামিকা ২৫ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে করেন ২৯ রান। আইপিএলে খেলায় এই ম্যাচে নেই সাকিব আল হাসান। খেলেননি রাজস্থান রয়্যালসের বিদায়ের পর দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া মুস্তাফিজুর রহমানও। ছিলেন না পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৭/৭ (নাঈম ১১, লিটন ১৬, সৌম্য ৩৪, মুশফিক ১৩, আফিফ ১১, সোহান ১৫, শামীম ৫, মেহেদি ১৬*, তাসকিন ৪*; চামিকা ২-০-১১-০, চামিরা ৪-০-২৭-৩, কুমারা ৪-০-২৪-১, মাহিশ ৪-০-৩১-১, হাসারাঙ্গা ৪-০-২৪-১, শানাকা ২-০-১৭-১)
শ্রীলঙ্কা: ১৯ ওভারে ১৪৮/৬ (কুশল পেরেরা ৪, নিশানকা ১৫, চান্দিমাল ১৩, আভিশকা ৬২*, হাসারাঙ্গা ৭, রাজাপাকসে ০, শানাকা ৭, চামিকা ২৯*; তাসকিন ৪-০-২৫-১, নাসুম ৪-০-৩৪-০, মেহেদি ৩-০-২২-১, শরিফুল ৪-০-৪১-১, সৌম্য ৩-০-১২-২, আফিফ ১-০-৮-০)
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।